Saturday, July 23, 2016

নরসিংদীতে ট্রলার ডুবে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯




নরসিংদীর রায়পুরায় আড়িয়াল খাঁ নদে ট্রলার ডুবে শিশুসহ নয়জন নিহত হয়েছে। আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার উত্তর বাখননগর ইউনিয়নের জংগী শিবপুর বাজার ঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।



প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিদের অভিযোগ, অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাইয়ের কারণে ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিদের বরাত দিয়ে পুলিশও একই কথা বলছে।



এ ঘটনায় কতজন নিখোঁজ রয়েছে, তা নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ। তবে স্থানীয় ব্যক্তিদের ভাষ্য, শিশুসহ অন্তত ১০ থেকে ১৫ নিখোঁজ থাকতে পারে। তবে নিখোঁজ থাকার বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি।হত ব্যক্তিরা হলেন দেওয়ানের চর এলাকার মালদারের নেছা (৮০) ও তাঁর নাতি ইয়াছিন (৭), চর মরজাল এলাকার ফুলেছা বেগম (৫০), বারৈচা এলাকার রফিকুল ইসলামের ছেলে রাকিব মিয়া (১২), একই এলাকার মিলন মিয়ার মেয়ে মারজিয়া বেগম (৩), আকতার মিয়ার ছেলে সম্রাট মিয়া (৮), রবিউল্লাহ মিয়ার স্ত্রী মালা বেগম (২৫) ও মেয়ে সুমাইয়া আক্তার (৫) ও সুন্দর আলীর মেয়ে জেরিন আক্তার (৮)।



প্রত্যক্ষদর্শী, এলাকাবাসী, পুলিশ ও সাঁতরে তীরে ওঠা যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বারৈচা এলাকার ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য আবদুল হাইয়ের নেতৃত্বে নারী, শিশুসহ শতাধিক ব্যক্তি দুটি ট্রলারে করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বড়ইকান্দি এলাকার গণি শাহ মাজারে যাচ্ছিলেন। বেলা পৌনে ১১টার দিকে ৪০ থেকে ৫০ জন নিয়ে একটি ট্রলার জংগী শিবপুর বাজার ঘাট থেকে ছাড়ে। অপরটি অপেক্ষাকৃত বেশি প্রায় ৬০ থেকে ৭০ জন যাত্রী নিয়ে বেলা ১১টার দিকে ছাড়ে। ​ছাড়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ট্রলারটি ডুবে যায়। এতে বেশির ভাগ যাত্রী সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও শিশু ও নারীরা ডুবে যায়। আশপাশের ট্রলারে থাকা লোকজনের চিৎকারে বাজারে থাকা লোকজন দৌড়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে কয়েকজনকে উদ্ধার করে। কিন্তু প্রচণ্ড বাতাস থাকায় স্থানীয় ব্যক্তিরা উদ্ধারকাজ ভালোভাবে চালাতে পারেনি।



খবর পেয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) খন্দকার নুরুল হক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল মতিন, রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজহারুল ইসলাম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে স্থানীয় ব্যক্তিদের উদ্ধারকাজ তদারক করেন। পরে দুপুর সোয়া দুইটার দিকে নরসিংদী ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শক মহসীন প্রধানের নেতৃত্বে চার সদস্যের ডুবুরি দল উদ্ধারকাজে নামেন। এর আগে ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটি ইউনিট নৌকা দিয়ে উদ্ধারকাজে স্থানীয় ব্যক্তিদের সহায়তা করেন। ঘটনার পরপরই ওই নৌকার মাঝি ও ইউপি সদস্য আবদুল হাই গা ডাকা দিয়েছেন।



প্রত্যক্ষদর্শী ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘আমি ঘাটেই বসে ছিলাম। দ্বিতীয় নৌকাটি অনেকটা জরাজীর্ণ ছিল। যাত্রীও বেশি নিয়েছিল। তাই ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রথমে একদিকে কাত হয়ে যায় এবং পরে উল্টে যায়। আর ডুবে যাওয়া ট্রলারে শিশু ও নারী থাকায় হতাহতের ঘটনাটি বেশি হয়েছে। যে পরিমাণ লোকজন ট্রলারে দেখেছি আর যে পরিমাণ লোক সাঁতরে উঠেছে; খুব বেশি হলে ১০–১২ জন নিখোঁজ থাকতে পারে। আবার নাও থাকতে পারে।’



স্থানীয় ইউপি সদস্য রানা মিয়া বলেন, ‘আমি বাজারে ছিলাম। লোকজনের চিৎকার শুনে দৌড়ে ঘাটে গিয়ে দেখি, নৌকা উল্টে যাচ্ছে। পরে সঙ্গে সঙ্গে তরুণ ছেলেদের ডেকে নিয়ে উদ্ধার কাজে লেগে যাই। ১০–১৫ জন নিখোঁজ থাকতে পারে। এখন ডুবুরি দল কাজ করছে, দেখা যাক কয়জনকে উদ্ধার করা যায়।’



রায়পুরা থানার ওসি আজহারুল ইসলাম প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিদের বরাত দিয়ে বলেন, অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাইয়ের কারণেই ট্রলারটি ঘাটেই ডুবে গেছে। এতে শিশু ও বৃদ্ধাসহ নয়জন নিহত হয়েছেন।



অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) খন্দকার নুরুল হক বলেন, ‘আমরা শিশু ও নারীসহ নয়জন নিহত হওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হতে পেরেছি। আর নিখোঁজ থাকার বিষয়ে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। তারপরও যতক্ষণ দিনের আলো থাকে, ততক্ষণ আমরা ডুবুরি দিয়ে উদ্ধারকাজ চালাব।’

No comments:

Post a Comment